বাংলা সালতানাত : দিল্লির পূর্ণ আনুগত্যকাল 




বাংলা সালতানাত



নাসির-উদ-দীন মাহমুদ (১২২৭-১২২৯সাল)

   

নাসির-উদ-দীন মাহমুদ ছিলেন দিল্লীর সুলতান শামস-উদ-দীনের বড়ো পুত্র।  কিন্তু মাত্র দুই বছরের মত সময় শাসনকার্য চালিয়ে মৃত্যুবরন করেন। ঐ সময়কালে সুলতান শামস-উদ-দীন ইলতুতমিশ পুত্রকে মালিক-উশ-শারক বা পূর্রাঞ্চলের অধিপতি খেতেব ভুষিত করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সুলতান ইলতুতমিশ পরলোকগত প্রিয় পুত্রের স্রিতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তার কনিষ্ঠ পুত্রের নামও রাখেন নাসির-উদ-দীন মাহমুদ। এই নাসির-উদ-দীন মাহমুদ পরে দিল্লির মসনদে বসেন এবং ২০ বৎসরকাল রাজত্ব করেন। 





দওলত শাহ বিন মওদুদ (১২২৯সালে কিছু সময়ের জন্য)



নাসির-উদ-দীন মাহমুদ অকালমৃত্যতে লাখনৌতি বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়। সে অবস্থায় আভ্যন্তরীণ শান্তির রক্ষার জন্য দওলত শাহ বিন মওদুদ নামক একজন সেনানায়ক লাখনৌতিতে নেতৃত্ব গ্রহন করেন। 


বাংলা সালতানাত : দিল্লির পূর্ণ আনুগত্যকাল



ইখতিয়ার -উদ-দীন বলকা খিলজি (দওলত শাহর পর কিছু সময়ের জন্য)


দওলত শাহ লাখনৌতিতে শাসনকার্য হস্তগত করার আব্বাসীয় খালীফা, দিল্লীর সুলতান এবং নিজের নামে মুদ্রা চালু করেন। কিন্তু ইখতিয়ার-উদ-দীন বলকা খিলজী নামক অন্য এক সেনানায়ক দওলত শাহর মুদ্রা প্রচলনের ঔদ্ধত্য করতে না পেরে বিদ্রোহ করেন এবং দওলত শাহকে হয় হত্যা নয় তো বিতাড়িত করে  ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু ঐতিহাসিক মিনহাজের ভাষ্য অনুযায়ী ১২২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দে  সুলতান ইলতুতমিশ নিজে লাখনৌতি আক্রমণ করে বলকা খিলজীকে বিতাড়িত করেন।  



মালিক আলা-উদ-দীন জানী (১বছরেরও বেশি সময়ের জন্য)


অতঃপর সুলতান ইলতুতমিশ মালিক আলা-উদ-দীন জানীকে লাখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিল্লীতে ফিরে যান। তিনি এক বছরেরও কিছু সময় লাখনৌতির শাসনকর্তার পদে অধিস্ঠিত ছিলেন। 

মালিক সইফ-উদ-দীন আইবক (প্রায় ৩ বছরের জন্য)


কোন কারণে মালিক আলা-উদ-দীন জানীকে লাখনৌতির শাসনকর্তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সুলতান ইলতুতমিশ মালিক সইফ-উদ-দীন আইবককে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সইফ-উদ-দীন আইবক ছিলেন কারাখিতাই সম্প্রদায়ভুক্ত তুর্কী এবং সুলতান ইলতুতমিশের ক্রীতদাস।  তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ শাসক এবং সাহসী যোদ্ধা। তার শাসনকালে পূর্ববঙ্গ আক্রমণ করে অনেক হাতী হস্তগত করেন এবং সেগুলো  সুলতান ইলতুতমিশের নিকট প্রেরণ করেন। তাতে মুগ্ধ হয়ে সুলতান মালিক সইফ-উদ-দীন আইবককে য়ুগনতৎ খেতাব ভূষিত করেন। ১২৩৬ সালের ২৯শে এপ্রিল সুলতান ইলতুতমিশ পরলোকগমন করলে দিল্লীতে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। এদিকে ঐ সময়ে লাখনৌতিতেও পরলোকগমন করেন মালিক-উদ-দীন আইবক। 


আওর খান (কিছু দিনের জন্য)


এই সময়ে আওর খান নামক একজন উচ্চাভিলাষী তুর্কী সেনানায়ক লাখনৌতিতে ক্ষমতা দখল করেন। দিল্লীতে তখন সুলতান ইলতুতমিসশের অকম্র্ণ্য পুত্র রুকন-উদ-দীন ফীরজকে সরিয়ে সুলতানা রাজিয়া মসনদে আরহণ করেন। ঐ সময়ে বিহারের শাসনকর্তা ছিলেন তুগরল তুগান খা। উচ্চাভিলাষের বশবর্তী হয়ে দিল্লীর কোন অনুমতি না নিয়েই তুগরল তুগান খা লাখনৌতি আক্রমণ করেন। যুদ্ধে নিহত হন আওর খান। ফলে বিহার ও লাখনৌতির শাসন ক্ষমতা হস্তগত করেন তুগরল তুগান খা। তিনিও আওর খানের মত ছিলেন কারাখিতাই সম্প্রদায়ভুক্ত তুর্কী এবং সুলতান ইলতুতমিশের ক্রীতদাস। 



বাংলা সালতানাত : দিল্লির পূর্ণ আনুগত্যকাল

তুগরাল তুগান খা (১২৩৬-১২৪৫ সাল)


ইওজ খিলজীর পর তুগান খার লাখনৌতি শাসনের মেয়াদই ছিল দীর্ঘকাল ব্যাপী। প্রায় ৯ বছর ধরে তিনি লাখনৌতির শাসনকর্তা ছিলেন। যদিও তিনি জোরপূর্বক লাখনৌতির শাসন ক্ষমতা হস্তগত করেন, তবু সুলতানা রাজিয়ার নিকট বহুমূল্য উপহার পাঠিয়ে সুলতানার অনুমোদন লাভ করে তিনি তার ক্ষমতাকে আইনসিদ্ধ করে নেন। সুলতানা রাজিয়া তখন দিল্লীতে নিজ ক্ষমতা সংহত করতে ব্যস্ত। তাই তুগরল তুগান খাকে না ঘাটিয়ে শাসনকর্তা পদের অনুমোদন দেন এবং তুগরল্কে ছত্র, লাল চাদর, নিশানাদি রাজকীয় উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করেন। সুলতানা রাজিয়ার মৃত্যুর পরেও তুগান খা দিল্লীর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখেন। যিনিই যখন দিল্লীতে সুলতান হয়ে বসতেন, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেন তুগরল তুগান খা। তাই বলে তার কোন উচ্চাভিলাষ ছিলা না, তা নয়।



বাংলা সালতানাত : দিল্লির পূর্ণ আনুগত্যকাল




 ত্রিহুত আক্রমণ করে তুগরল তুগান খা অনেক ধন-সম্পদ হস্তগত করেন এবং গঠন করেন এক বিশাল সৈন্যবাহিনী ও নৌবাহিনী এবং সেই বিশাল বাহিনীসহ দিল্লী সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের প্রদেশগুলি অর্থাৎ অযোদ্ধা, কারামাণিকপুর এবং গঙ্গা-যমুনা--দোয়াব অঞ্চল জয় করার অভিপ্রায়ের অগ্রসর হলেন। সেটা ১২৪২ সালে, আলা-উদ-দীন মাসুদ শাহ তখন দিল্লীর দুর্বলতম সুলতান। এলাহাবাদে পৌঁছে তুগরল তুগান খা দিল্লী সুলতানের নিকট পাঠালেন ভহুমূল্য উপহার। উপহারে মুগ্ধ সুলতান দূত মারফত খিলাত পাঠিয়ে তুগান খাকে সম্নানিত করলেন। এমনি বিচিত্র ব্যবহারর পরে তুগরল তুগান খা লাখনৌতিতে ফিরে আসার জন্য তৈরি হলেন। তখনই তিনি খবর পেলেন যে, উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেব রাঢ় ও বঙ্গ আক্রমণ করেছে। লাখনৌতিতে ফিরে প্রতি আক্রমণের জন্য তিনি আবার বাহিনী পরিচালিনা করলেন। যুদ্ধ হলো, পরাস্ত হয়ে পিছু হটল উড়িষ্যা বাহিনী। উল্লাসিত বিজয়ী তুগরল তুগান খা উড়িষ্যা রাজ্যরও কিছু অংশ তার দখলে এসে গেল। 





আনন্দউৎসবে মেতে উঠলো তুগান খার সৈন্যরা । আর এখনেই হল ভুল । উরিষ্যা বাহিনির ছোট ছোট দলগুলি তুগান খার বাহিনিকে বারবার অতর্কিত হামলা করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল।তাই বিজয়ী হয়েও পরাজিত হল লাখনৌতি বাহিনি।নাস্তানাবুদ হয়ে লাখনৌতিতে ফিরে এলেন তুগ্রুল তুগান খা এবং নরসিংহদেবের উপর প্রতিশোধ নেবার অভিপ্রায়ে দিল্লিতে সাহায্য চেয়ে পাঠালেন। উড়িষ্যা রাজ্ এর মধ্যে দখল করে নিয়েছেন বীরভূমির লাখনৌর। হত্যা করেছেন লাখনৌর শাসক ফকর উল মূলক করিম উদ্দিন লাখেরি সহ অনেক মুসলমান কে।  রাঢ় থেকে উচ্ছেদ হলো মুসলিম শাসন। তখনই দিল্লী সুলতান কারামাণিকের শাসনকর্তা মালিক কারাকাশ খান ও অযোধ্যার শাসনকর্তা মালিক তমর খান কিরানকে বিরাট বাহিনীসহ পাঠালেন লাখনৌতির পথে। ইতিমধ্যে ১২৪৫ সালের ১৪ই মার্চ লাখনৌতি অবরোধ করলেন উরিষ্যারাজ নরসিংহদেব। কিন্তু দিল্লী বাহিনীর এগিয়ে আসার খবর পেয়েই তিনি অবরোধ উয়াঠিয়ে লাখনৌতি ছেরে চলে যান তাঁর বাহিনীসহ। 





উড়িষ্যা বাহিনীর চাপমুক্ত হয়েই তুগরল তুগান খা দাবি জানালেন যে, কারাকাশ খান ও তমর খান কিনারাকেও তাদের বাহিনীসহ লাখনৌতি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু মালিক তমর খান এতে রাজী হলেন না। আরম্ভ হলো যুদ্ধ। লাখনৌতিতে অবরুদ্ধ তুগরল তুগান খা অবশেষে সন্ধি স্থাপন করলেন এবং নিজে ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন নিয়ে দিল্লীর পথে অগ্রসর হলেন। লাখনৌতির মসনদে আরোহণ করলেন উচ্চাভিলাষী মালিক তমর খান কিনার।


If you visit mwlbd then click the download link.


You have to wait 60 seconds.








 










Post a Comment